মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারি, হাদিস নং : ৬৭২)।
* রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর। (মুসলিম, হাদিস নং: ১১৬৯)।
নামাজের নিয়ত আরবিতে
‘নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়া'লা রাকআ'তাই ছালাতি লাইলাতিল কদর-নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কা’বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার’।
শবে কদরের নামাজ
লাইলাতুল কদরে বিশেষ কোনো নামাজের পদ্ধতি নেই। লাইলাতুল কদরের রাতে নামাজ দুই রাকাত করে যত সুন্দর করে পড়া যায়,যত মনোযোগ সহকারে পড়া যায় ততই ভালো। আল্লাহ সুবহানাআলাতায়ালার প্রতি যত খুশু খুজুসহকারে নামাজ আদায় করা যায়, ততই ভালো। দুই রাকাত, দুই রাকাত করে আপনি যত খুশি পড়তে পারবেন।
* একদা হযরত উবায়দা (রা.) নবী করীম (সা.) কে লাইলাতুল কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তখন নবীজী সেই সাহাবিকে বললেন রমজানের বেজোড় শেষের দশ দিনের রাতগুলোকে তালাশ করো। (বুখারি, হাদিস নং: ২০১৭)।
* হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কেউ লাইলাতুল কদর খুঁজতে চায় তবে সে যেন তা রমজনের শেষ দশ রাত্রিতে খোঁজ করে। (মুসলিম, হাদিস নং : ৮২৩)।
তাই ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজানের রাতগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
* ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) বলেন, যে লোক শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয় সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হল। আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেলো কিন্তু ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৭)।
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রাসূল আমি যদি কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত হতে পারি তবে আমি কি করব? তখন রাসূল (সা.) আমাকে এই দুয়া পাঠ করার জন্য বললেন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৫১)।
আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে। [সুরা ক্বদর - ৯৭:১]
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ
শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? [সুরা ক্বদর - ৯৭:২]
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। [সুরা ক্বদর - ৯৭:৩]
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। [সুরা ক্বদর - ৯৭:৪]
سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। [সুরা ক্বদর - ৯৭:৫]
"লাইলাতুল-কদর (কদরের রাত) হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।" [আল-কোরআন ৯৭:৩]
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সাওয়াব লাভের আশায় সাওম (রোযা/রোজা/সিয়াম/ছিয়াম) পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যাক্তি ঈমানের সাথে, সাওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।" [বুখারী]
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তা (লাইলাতুল কদর) রমযানের শেষ দশকে তালাশ কর। লাইলাতুল কদর (শেষ দিক হতে গনণায়) নবম, সপ্তম বা পঞ্চম রাত অবশিষ্ট থাকে। [বুখারী]
আয়েশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন: রমজানের শেষ দশ দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোমরবন্ধনী শক্ত করে বেঁধে নিতেন (অর্থাৎ অধিক পরিশ্রম করতেন) এবং সারা রাত সালাত (নামায) পড়তেন এবং তাঁর পরিবারকে ইবাদতের জন্য জাগ্রত রাখতেন। [বুখারী]
আয়েশা (রাদিআল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেছেন: আমি জিজ্ঞাসা করেছি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি লাইলাতুল কদরকে বুঝতে পারি, তবে এতে কী দোয়া করব?" তিনি জবাব দিলেন, তুমি দোয়া করবে: “ আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউউন তুহিব্বুল ‘আফওয়া, ফা’ফু আন্নি ” (হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, এবং আপনি ক্ষমা ভালবাসেন; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন)। [তিরমিজি]
কদরের রাতে যদি পুরো রাত জুড়ে সালাত আদায় করতে নাও পারেন, কয়েকটি সহজ ইবাদত আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। তাই রমজানের শেষ দশ রাত্রির প্রত্যেক রাতে আপনি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার আন্তরিক উদ্দেশ্য নিয়ে এই সহজ ইবাদতগুলি করার চেষ্টা করতে পারেন:
১) জামাতের সাথে ইশা ও ফজরের সালাত আদায় করুন। (সারা রাত নফল সালাত আদায় করার সাওয়াব লেখা হয়)
২) কিয়াম-উল-লাইল বা তাহাজ্জুদ কমপক্ষে ২ রাকা'আত পড়ুন।
৩) কমপক্ষে ১০ টাকা দান করুন।
৪) সূরা ইখলাস (ক্কুল হু আল্লাহু আহাদ) ৩ বার পড়ুন। (একবার কোরআন খতমের সাওয়াব লেখা হয়)
৫) কাউকে খাওয়ান অথবা সদয় আচরণ করুন।
৬) বেশী বেশী ইস্তেগফার করুন, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চান।
৭) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাওয়াত ও সালাম প্রেরণ করুন।
৮) বেশী বেশী দু'আ করুন আপনার জন্য, আপনার পরিবারের জন্য এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ'র জন্য।
৯) এবং অবশ্যই যে কোন ধরণের বড় বা ছোট গুনাহ এড়িয়ে চলার এবং সবসময় আল্লাহর কথা স্মরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন।
ও আল্লাহ! আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন, আমাদেরকে হিদায়েত দিন, আমাদের নিয়তসমুহ পরিশুদ্ধ করুন। ও আল্লাহ! যেভাবে আমল করলে আপনি সবচাইতে বেশী সন্তুষ্ট হন আমাদেরকে সেভাবে সকল নেক আমল করার তৌফিক দিন, আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করে দিন এবং আমাদের উপর পরিপূর্নরুপে সন্তুষ্ট হয়ে যান চিরকালের জন্য। আল্লাহুম্মা আমীন।
#রমজান #লাইলাতুলকদর
0 Comments